গল্পের নাম: **ঘরের জন্য বিরোধ **



সু
ফলপুর গ্রামটি শান্তিপূর্ণ এবং ছোট হলেও মাঝে মাঝে সেখানে বড় ঝগড়া বাঁধে। বিশেষ করে সম্পত্তি নিয়ে। এই গ্রামে ছিল এক মধ্যবিত্ত পরিবার—রশিদ মিয়ার পরিবার। রশিদ মিয়ার দুই ছেলে—কামাল আর জামাল। রশিদ মিয়া জীবনের শেষ বয়সে এসে একটি নতুন ঘর বানানোর জন্য জায়গা কিনেছিলেন, যেখানে তিনি ছেলেদের জন্য আলাদা আলাদা ঘর বানিয়ে দিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর সেই ঘরকে কেন্দ্র করে শুরু হলো এক বিশাল ঝগড়া।


রশিদ মিয়া মারা যাওয়ার পর ঘরটির মালিকানা নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে তিক্ততা দেখা দেয়। রশিদ মিয়ার মৃত্যুর সময় ঘরটি পুরোপুরি নির্মিত হয়নি, এবং কোনো দলিল বা লিখিত উইলও তিনি রেখে যাননি। ফলে, দুই ভাই নিজেদের ইচ্ছামতো ঘরের দখল নিতে চায়।


একদিন কামাল এসে ঘরটির সামনের অংশে নিজের তালা লাগিয়ে দিল, যেন সে দাবি করতে পারে যে ঘরটি তার। জামাল বিষয়টি দেখে অত্যন্ত রেগে গেল। সে চিৎকার করে কামালকে বলল, "তুই কি মনে করিস ঘরটা তোর একার? আমি কোনোভাবেই তোকে পুরোটা দখল করতে দেব না।"


কামাল রেগে গিয়ে বলল, "আমি বড় ভাই, সুতরাং আমার অধিকার বেশি। তুই যেখানে খুশি গিয়ে থাক, এই ঘরটা আমি নেব।"


জামাল এবার আরও উত্তেজিত হয়ে উঠে, "বড় ভাই বলে কিছু নেই! বাবা তো কোনো লিখিত দলিল রেখে যাননি। আমি আমার অংশ চাই, আর সেটা এখানেই পাব।"


তাদের মধ্যে তর্ক বাড়তে থাকে, এবং একসময় তা হাতাহাতিতে পরিণত হয়। দুই ভাই একে অপরকে মারতে থাকে। গ্রামবাসীরা এই বিশৃঙ্খলা দেখে তাদের থামানোর চেষ্টা করে, কিন্তু দুই ভাইয়ের রাগ এত বেশি ছিল যে কেউ কিছুতেই তাদের ঠেকাতে পারছিল না। 


এক পর্যায়ে কামাল একটি লাঠি তুলে নিয়ে জামালকে আঘাত করে, আর জামাল রেগে গিয়ে তাকে ফিরতি আঘাত করে। ঘটনাটি রক্তারক্তিতে গড়ায়, এবং দুই ভাই রাস্তায় মাটিতে পড়ে মারামারি করতে থাকে। গ্রামবাসীরা বাধ্য হয়ে তাদের আলাদা করে। দুই ভাই রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে বসে হাঁপাতে থাকে, এবং তখনই একজন মুরব্বি এসে কঠিন কণ্ঠে বলেন, "তোমরা কি একে অপরের রক্তপাতে সুখ পাবে? বাবা-মার রেখে যাওয়া ঘর আর সম্পত্তির জন্য নিজেদের জীবন শেষ করতে চাও?"


মুরব্বির কথা শুনে দুই ভাই কিছুটা স্তব্ধ হয়। তবুও তারা কেউই মাথা নিচু করে না। দু'জনেই জেদ ধরে যে ঘরের মালিকানা পেতে চায়।


মুরব্বি বলেন, "এভাবে হবে না। যদি নিজেদের মধ্যে মীমাংসা করতে না পারো, তবে পঞ্চায়েতের কাছে যাও। আমরা বিচার করে দেব।"


পরের দিন গ্রামের পঞ্চায়েত বসে। পঞ্চায়েতের মুরব্বিরা দুই ভাইয়ের কথা শুনে সিদ্ধান্ত দেন যে, যেহেতু ঘরটি অসম্পূর্ণ এবং রশিদ মিয়া কোনো উইল করেননি, সুতরাং দুই ভাইকে মিলেমিশে এটি সমাপ্ত করতে হবে। ঘরটি সমানভাবে ভাগ করে দুজনেই থাকবেন। যদি কেউ একে অপরকে ক্ষতি করার চেষ্টা করে, তবে গ্রাম থেকে তাদের বের করে দেওয়া হবে।


দুই ভাই প্রথমে সন্তুষ্ট ছিল না। কিন্তু গ্রামের মুরব্বিদের সম্মান রেখে এবং নিজেদের পরিবারের শান্তি রক্ষার জন্য তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে, এই ঘর তারা দুজন মিলে সমানভাবে ভাগ করে নেবে। এরপর তারা একসঙ্গে কাজ শুরু করে, ঘরটি সম্পূর্ণ করে এবং নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়।


যদিও সেই দিনের মারামারিতে তাদের শারীরিক ক্ষতি হয়েছিল, তারা বুঝতে পারল যে, সম্পত্তির চেয়ে সম্পর্কই বড়। যদি সেই মুরব্বি ও গ্রামবাসীরা তাদের থামাতেন না, তাহলে তারা নিজেদের হাতে নিজেদের ধ্বংস করে ফেলত।

Comments

Popular posts from this blog

pdf file